বাড়ি ভাড়া চুক্তি (বাড়ী ভাড়া এগ্রিমেন্ট) সম্পর্কে একটি বিশদ নিবন্ধ
বাড়ি ভাড়া চুক্তি (বাড়ী ভাড়া এগ্রিমেন্ট) সম্পর্কে একটি বিশদ নিবন্ধ
Blog Article
বাড়ি ভাড়া চুক্তি (বাড়ী ভাড়া এগ্রিমেন্ট) সম্পর্কে একটি বিশদ নিবন্ধ
বাড়ি ভাড়া চুক্তি বা বাড়ী ভাড়া এগ্রিমেন্ট হলো বাড়িশ্রমিক (ভাড়াটিয়া) ও বাড়িওয়ালার মধ্যে লিখিত চুক্তি, যা উভয়পক্ষের অধিকার ও কর্তব্য স্পষ্ট করে। একটি সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ চুক্তি থাকলে ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝি ও আইনগত ঝামেলা এড়ানো যায়।
১. ভূমিকা ও গুরুত্ব
বাড়ি ভাড়া চুক্তি শুধুমাত্র ভাড়া পরিশোধের একটি মাধ্যম নয়; এটি বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার একটি আইনগত দলিল। বাংলাদেশে যেহেতু ভাড়া নিয়মিত বাড়ানো-কমানোর রুটিন রয়েছে, সেহেতু সময়মত সঠিক চুক্তি থাকলে উভয়পক্ষই সুরক্ষিত থাকে।
২. চুক্তির মূল উপাদান
১. চুক্তি কর্তৃপক্ষ
-
বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার পূর্ণ নাম, পিতার নাম, গ্রাম/এলাকা, উপজেলা/জেলা উল্লেখ করতে হবে।
২. চুক্তির সময়কাল -
চুক্তি শুরু ও শেষের সঠিক তারিখ (দিন-মাস-বছর) লিখতে হবে। সাধারণত এক বছরের মেয়াদ নেওয়া হয়।
৩. ভাড়া ও অগ্রিম -
মাসিক ভাড়া পরিমাণ, পরিশোধের পদ্ধতি (নগদ/ব্যাংক ট্রান্সফার) এবং অগ্রিম (ডিপোজিট) কত নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করতে হবে।
৪. সার্ভিস চার্জ ও বিল -
পরিষেবা চার্জ, বিদ্যুৎ–পানি–গ্যাস বিল ভাড়াটিয়া নেবে নাকি বাড়িওয়ালা বহন করবেন, তা প্রবণতা অনুযায়ী উল্লেখ করুন।
৫. জমি–বাড়ি সম্পর্কিত বিবরণ -
বাড়ির নম্বর, ফ্ল্যাট বা ফ্ল্যাট ব্লকের তথ্য, ঘরের সংখ্যা, দরজা–জানালা, আসবাবপত্র ইত্যাদি।
৬. ম ডিউটি ও নিবন্ধন -
সরকার নির্ধারিত স্ট্যাম্প ডিউটি পরিশোধ ও রেন্ট কন্ট্রোল আইনের আওতায় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
৩. দায়-দায়িত্ব ও শর্তাবলী
-
মেরামত:
-
ঘরের সাধারণ ক্ষত–ক্ষতি (দরজা–জানালা খোলা, প্লাস্টার খসে পড়া) বাড়িওয়ালা মেরামত করবেন, কিন্তু ভাড়াটিয়ার গাফিলতির কারণে হওয়া ক্ষতি ভাড়াটিয়ার দায়ে।
-
-
ভাড়া বাড়ানোর শর্ত:
-
চুক্তির মেয়াদে ভাড়া বাড়ানোর শর্ত, বৃদ্ধির সীমা (সাধারণত ১০–১৫%) স্পষ্ট করে লিখতে হবে।
-
-
বাড়ি পরিদর্শন:
-
বাড়িওয়ালা বারবার আসবেন কি না, পূর্ব-নোটিশের শর্তাবলী উল্লেখ করা দরকার।
-
-
বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত:
-
চুক্তি শেষের পূর্বে যদি ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে দিতে চান, কত দিনের নোটিশ দিতে হবে।
-
৪. আইনগত ব্যাপার
১. স্ট্যাম্প ডিউটি
-
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিতে যথাযথ স্ট্যাম্প লাগানো বাধ্যতামূলক।
২. রেন্ট কন্ট্রোল আইন -
স্থানীয় রেন্ট কন্ট্রোল অফিসে সেই চুক্তি নিবন্ধন করে নিলে ভবিষ্যতে আইনগত সহায়তা সহজ হয়।
৩. বিস্ময়কর পরিস্থিতি -
যদি বাড়িওয়ালা চুক্তি ভঙ্গ করেন বা ভাড়াটিয়া ভাড়া না দেন, উভয়পক্ষ আইনগত কার্যালয়ে মামলা করতে পারেন।
৫. চুক্তি প্রস্তুতির পরামর্শ
-
সর্বদা দুই প্রতিলিপি তৈরি করুন—একটি বাড়িওয়ালার জন্য, আরেকটি ভাড়াটিয়ার জন্য।
-
দস্তাবেজে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া উভয়ের স্বাক্ষর ও দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর নিন।
-
আইনজীবী বা স্থানীয় পাড়া আবির্ভাব করা অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে চূড়ান্তকরণ করলে বোঝাপড়া আরও সুরক্ষিত হয়।
সঠিকভাবে প্রস্তুত ও নিবন্ধিত বাড়ি ভাড়া চুক্তি উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে এবং দীর্ঘমেয়াদে আইনগত ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়। তাই বাড়ি ভাড়া নেওয়ার আগে একটি সম্পূর্ণ ও আইনসম্মত এগ্রিমেন্ট করা একান্ত জরুরি।
Report this page